এখনই সময় সচেতন হওয়ার – গর্ভবতী মায়েদের জন্য এক নতুন ঝুঁকি “লুপাস”

লুপাস একটি জটিল অটোইমিউন রোগ। এই রোগে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের সুস্থ কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর আক্রমণ করে। ফলে শরীরে প্রদাহ এবং বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এক ধরনের মাল্টি সিস্টেম ডিজিজ, যা ত্বক, চোখ, মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

লুপাস রোগ কেন হয় তা পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে জেনেটিক বা বংশগত কারণ, পরিবেশগত প্রভাব, ধূমপান, হরমোনজনিত সমস্যা এবং কিছু ভাইরাস সংক্রমণ এর জন্য দায়ী হতে পারে। নারীদের মধ্যে লুপাসের ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ বেশি।

লুপাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত শরীরে ব্যথা, জ্বর এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া নিয়ে শুরু হয়। এর পাশাপাশি ত্বকে র‍্যাশ, চুল পড়া, ঠান্ডা পানিতে হাতের রঙ বদলে যাওয়া, এবং মুখের ঘা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় লুপাস কিডনি, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ও লিভারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এমনকি রোগীরা খিঁচুনি, স্ট্রোক, বা ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

নারীদের ক্ষেত্রে লুপাসে গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। অ্যান্টিফসফোলিপিড সিন্ড্রোম নামে এক ধরনের লুপাস গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। প্রায়ই দেখা যায় ১০ সপ্তাহের পর গর্ভপাত হচ্ছে বা গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি গর্ভের সন্তান মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারে। লুপাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে এবং অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।

চিকিৎসা হিসেবে রোগীর তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা হয়। ইমিউনোসপ্রেসিভ মেডিকেশনও প্রয়োগ করা হয় রোগের অগ্রগতি রোধে। গর্ভধারণের আগে ফার্টিলিটি কাউন্সিলিং অত্যন্ত জরুরি। সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে লুপাসের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

ডা. হাবিব ইমতিয়াজের মতে, অনেক রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় লুপাস গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। ফলে রোগীর কিডনি, মস্তিষ্ক, এবং ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি মনে করেন, সঠিক চিকিৎসা এবং ফলোআপই লুপাস মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি।

সূত্রঃ ডেইলী স্টার

Leave a Reply